
চট্টগ্রামের হালিশহরে বিশ্বজিৎ সাহা খুলছেন নতুন ফার্মেসি। গাজীপুরের বোর্ডবাজারে রুমানা আক্তার ফিরছেন পুরোনো বিউটি পার্লার নিয়ে। একজনের জন্য এটি নতুন শুরুর গল্প। অপরজনের জন্য পুরোনো স্বপ্ন ধরে রাখার লড়াই। দুজনের মাঝেই মিল আছে—ট্রেড লাইসেন্স এখন সহজ, ডিজিটাল।
বিশ্বজিতের ফার্মেসি: নতুন যাত্রার টিকিট
দীর্ঘদিন অন্যের দোকানে কাজ করে এবার নিজের দোকান। নাম দিয়েছেন ‘সাহা মেডিকেল হল’। দোকান প্রস্তুত, ওষুধ এসেছে, সাইনবোর্ডও লাগানো। বাকি ছিল শুধু ট্রেড লাইসেন্স।
তিনি যান etradelicense.gov.bd ওয়েবসাইটে। অ্যাকাউন্ট করেন, তথ্য দেন, ব্যবসার ধরন বাছাই করেন: ফার্মেসি। জানেন—বিশেষ ব্যবসা হিসেবে কিছু বাড়তি কাগজ লাগবে।
যেমন লাগবে: ড্রাগ লাইসেন্স, ফার্মাসিস্ট সনদ, দোকানের ভাড়ার কাগজ, হোল্ডিং ট্যাক্স রশিদ, জাতীয় পরিচয়পত্র, ছবি, অঙ্গীকারপত্র এবং প্রয়োজনে অগ্নি ও পরিবেশ ছাড়পত্র। সব স্ক্যান করে আপলোড করেন। ছবি আপলোডে সমস্যা হলে লাইভ চ্যাটে সহায়তা পান।
মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিস ব্যবহার করে পেমেন্ট করেন। তিনদিন পর অফিসার আসেন দোকান দেখতে। সপ্তাহের মধ্যে লাইসেন্স রেডি হয়। ডাউনলোড করে প্রিন্ট দেন।
রুমানার পার্লার: পুরনো লাইসেন্সে নতুন আস্থা
‘গ্লো গার্ডেন বিউটি পার্লার’ চালু হয়েছিল চার বছর আগে। সেই সময় ট্রেড লাইসেন্স হয় ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের মাধ্যমে। এবার মেয়াদ শেষ। এইবার নিজেই উদ্যোগ নেন।
etradelicense.gov.bd তে লগইন করে আগের তথ্য খুঁজে পান। দেখেন—লাইসেন্স “Expired”। নতুন করে তথ্য টাইপ করা লাগে না। শুধু নতুন হোল্ডিং ট্যাক্স রশিদ, আপডেটেড ছবি আর পুরোনো লাইসেন্স কপি আপলোড করেন।
মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিস ব্যবহার করে পেমেন্ট করেন। তিন দিনেই লাইসেন্স নবায়ন হয়। ডাউনলোড করে প্রিন্ট দেন। এখন সেটি আয়নায় ঝুলছে—চেষ্টার প্রতিচ্ছবি হয়ে।
একটি লাইসেন্স, একাধিক অর্থ
দুই রকম ব্যবসা, দুই রকম প্রক্রিয়া। তবু একটা জিনিস এক—সবকিছু এখন অনলাইনে। নতুন ব্যবসায়ীরা লাইসেন্স করে শুরু করছেন নিশ্চিন্তে। পুরোনোরা নবায়ন করে রাখছেন নিয়মমাফিক।
দালাল নয়, ওয়েবসাইট এখন ভরসা। ইন্টারনেট না থাকলেও ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারে মিলছে সহায়তা। শুধু শহরে নয়, গ্রামাঞ্চলেও এখন ব্যবসায়ীরা নিজেরাই লাইসেন্সের প্রক্রিয়া সামলাচ্ছেন।
এর বাইরে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের উদ্যোগে ১০০-রও বেশি সরকারি সেবা নিয়ে চালু হচ্ছে ‘নাগরিক সেবা বাংলাদেশ’ নামে একটি নতুন আউটলেট। চলমান ডিজিটাল সেন্টারগুলোকেও এতে যুক্ত করা হবে। সেখানেও পাওয়া যাবে উল্লিখিত সেবাটি।
বাংলাদেশে এখন ২৯৪ ধরনের ব্যবসার জন্য ট্রেড লাইসেন্স দেওয়া হয়। ঢাকা উত্তর, দক্ষিণ, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনসহ প্রায় সব স্থানীয় সরকার সংস্থাই এখন অনলাইনে সেবা দিচ্ছে। অনেক এলাকায় ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের সত্যায়নও অনলাইনে জমা দেওয়া যাচ্ছে।
বিশেষ ব্যবসায় বাড়তি কাগজ লাগে, সাধারণে কম। কিন্তু সবার জন্যই প্রক্রিয়াটি এখন সহজ, স্বচ্ছ এবং প্রযুক্তিনির্ভর।
ট্রেড লাইসেন্স মানে শুধু অনুমতি নয়। এটা একটা স্বীকৃতি—রাষ্ট্র থেকে, সমাজ থেকে, নিজের কাছ থেকেও। বিশ্বজিতের নতুন দোকান, রুমানার পুরোনো পার্লার—দুটোই এখন বৈধ।
তাদের এই যাত্রায় সঙ্গী: একটি ওয়েবসাইট, কিছু স্ক্যান কপি আর একটি অনলাইন ফর্ম। এগুলোই বদলে দিচ্ছে শুরু করার মানে। বদলে দিচ্ছে টিকে থাকার সংজ্ঞা।