দ্বিতীয়ার্ধের চরম নাটকীয়তা শেষে ডর্টমুন্ডকে হারাল বার্সেলোনা
ইউএনবি
প্রকাশ: ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৪:৫২
জয়সূচক গোলটি করে ফেররান তোরেসের উল্লাস। ছবি: বার্সেলোনা
বার্সেলোনা-ডর্টমুন্ড ম্যাচ মানেই যেন সুন্দর ফুটবল, আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণ পসরা ও গোলের উচ্ছ্বাসের সমন্বয়ে জমজমাট এক লড়াই। এবারও তার ব্যতিক্রম হলো না। তবে উপভোগ্য ফুটবল উপহার দিয়েও নিয়তি মেনে শেষ পর্যন্ত ব্যথার মালা গলায় পরতে হয়েছে কালো-হলুদ জার্সিধারীদেরই।
চ্যাম্পিয়ন্স লিগে বার্সেলোনা ও ডর্টমুন্ডের মুখোমুখি হওয়া সাম্প্রতিক মৌসুমগুলোতে নিয়মিত ঘটনা হয়ে গেছে। এরই ধারাবাহিকতায় জিগনাল ইদুনা পার্কে স্বাগকিতদের ৩-২ গোলে হারিয়েছে কাতালান জায়ান্টরা।
ম্যাচের নাটক, উত্তেজনা, উল্লাস- সবই হয়েছে দ্বিতীয়ার্ধে। তাই বলে প্রথমার্ধ যে ম্যাড়মেড়ে ছিল, মোটেও তা নয়। এদিন ম্যাচের তৃতীয় মিনিটেই পরপর দুটি দারুণ সুযোগ পায় বার্সেলোনা। তবে ফিনিশিংয়ের অভাবে সুযোগগুলো মাঠে মারা যায়।
আক্রমণ-প্রতি আক্রমণে ম্যাচ এগিয়ে যাওয়ার মাঝে ত্রয়োদশ মিনিটে ফের আরেকটি সুযোগ তৈরি করে কাতালানরা। পাল্টা আক্রমণে উঠে বিপরীত পাশ ধরে অনেকটা ফাঁকায় এগোতে থাকা রাফিনিয়ার উদ্দেশে পায়ের পাতা দিয়ে বাঁকানো সিগনেচার পাস দেন লামিন ইয়ামাল। তবে সেবারও ফিনিংশের অভাবে সুযোগ হারায় দলটি।
চার মিনিট পর গোল করতে পারতেন মার্সেল জাবিৎসার, তবে সতীর্থের পাসে গতি থাকায় সুবিধা করতে পারেননি ডর্টমুন্ডের এই অস্ট্রিয়ান মিডফিল্ডার।
ম্যাচের শুরুতে বার্সাকে চেপে ধরার চেষ্টা করলেও সময় অতিবাহিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় হান্সি ফ্লিকের শিষ্যরা। আর তটস্থ হয়ে তাদের স্পেস কমিয়ে দিতে এবং সুযোগ পেলেই ক্ষিপ্র গতিতে আক্রমণে ওঠার চেষ্টায় থাকে নুরি সাহিনের শিষ্যরা।
ভুগতে ভুগতে ৪০তম মিনিটের শুরুতে দারুণ একটি আক্রমণে উঠে গোল পেয়েই গিয়েছিল ডর্টমুন্ড, কিন্তু সতীর্থের কাছ থেকে আসা উড়ন্ত ক্রসে মাথা লাগিয়েও ইনিয়াকি পেনিয়াকে পরাস্ত করতে ব্যর্থ হন সেরহু গিরাসি।
প্রথমার্ধে বলের ওপর একক আধিপত্য ধরে রাখলেও আক্রমণে খানিকটা নিষ্প্রভ ছিল বার্সা। ফলে গোলের উদ্দেশ্যে ৮টি শট নিয়ে তার তিনটি লক্ষ্যে রেখেও কাজের কাজ করতে ব্যর্থ হয় তারা।
অপরদিকে, প্রায় পুরোটা সময়জুড়ে রক্ষণ সামলানো ডর্টমুন্ড মাঝেমধ্যে দুয়েকটি সুযোগ তৈরি করলেও বার্সার অফসাইড ফাঁদ কিংবা ডিফেন্ডারদের নৈপুণ্যে বারবারই হতাশ হয়। ফলে স্কোরলাইনে কোনো পরিবর্তন না আনতে পেরেই বিরতিতে যায় দুদল।
বিরতির পর মাঠে নামার সঙ্গে সঙ্গে নতুন আঙ্গিকে আক্রমণের ডালি মেলে ডর্টমুন্ড। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ৫০তম মিনিটে ম্যাচে প্রথমবার বল-জালের মিলন ঘটান গিরাসি, কিন্তু ফের সেই অফসাইড ফাঁদে কাটা পড়ে তার গোলটি।
তবে এর তিন মিনিট যেতে না যেতেই দর্শনীয় এক গোলে বার্সাকে এগিয়ে নেন রাফিনিয়া।
প্রতিপক্ষের পা থেকে ছোঁ মেরে বল কেড়ে নিয়ে এগোতে থাকা রাফিনিয়াকে থ্রু বল বাড়ান দানি অলমো। তা ধরে বাঁ পাশ থেকে কোনাকুনি শটে ঠিকানা খুঁজে নেন বার্সা অধিনায়ক। এই গোলে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ৬ ম্যাচে তার গোলসংখ্যা হলো ৬টি। এছাড়া ব্লাউগ্রানা জার্সিতে চলতি মৌসুমে ২৩ ম্যাচে ২৭ গোলে অবদান (১৭+১০) রাখলেন ২৭ বছর বয়সী এই ব্রাজিলীয় ফরোয়ার্ড।
তবে সমতায় ফিরতে সময় নেয়নি ডর্টমুন্ড। ৭ মিনিট পরই বক্সের মধ্যে অপ্রয়োজনীয়ভাবে প্রতিপক্ষের এক খেলোয়াড়কে পেছন থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়ে ডর্টমুন্ডকে কার্যত পেনাল্টি উপহার দেন পাউ কুবারসি। আর তা থেকে আত্মবিশ্বাসী স্পট কিকে ম্যাচে সমতা টানেন গিরাসি।
গোল পাওয়ায় গর্জন শুরু করে দেয় জিগনাল ইদুনা। স্বাগতিক দর্শকদের সেই গর্জনের মাঝে মনোযোগ ধরে রেখে ৭৫তম মিনিটে বদলি নামা ফেররান তোরেসের গোলে ফের এগিয়ে যায় বার্সেলোনা। তবে এর মিনিট তিনেক পর ফের গিরাসির নামে উল্লাসে ফেটে পড়ে স্টেডিয়াম। মৌসুমে প্রথমবারের মতো বার্সার হাই লাইন ডিফেন্স চিরে ফাঁকা গোলে বল পাঠিয়ে দেন ফ্রান্সে জন্ম নেওয়া গিনি ফুটবলার গিরাসি।
অবশ্য এই গোলটিও ডর্টমুন্ডকে এমনি এমনিই যেন দিয়ে দেয় ফ্লিকের দল। পাসকাল গ্রস যখন ডিফেন্স চেরা পাস দিচ্ছেন, তখন বক্স ছেড়ে প্রায় মাঝমাঠে চলে আসেন পেনিয়া। ফলে উন্মুক্ত গোলে বল পাঠাতে কোনো সমস্যাই হয়নি গিরাসির।
দ্বিতীয়বার এগিয়ে যাওয়ার পর ডর্টমুন্ড সমর্থকরা এমন উদযাপন শুরু করে যে তাদের গর্জনে দ্বিগুণ উদ্যোমে আরও গোল পেতে হন্যে হয়ে ওঠে ডর্টমুন্ড। আর মাঠ ও মাঠের বাইরে থেকে আসা প্রবল চাপে কোণঠাসা হয়ে পিছিয়ে পড়া থেকে কোনোরকমে নিজেদের বাঁচিয়ে রাখে বার্সেলোনা।
তবে নাটকের তখনও আরও বাকি। আক্রমণে ডর্টমুন্ড এতটাই নিবিষ্ট হয়ে গিয়েছিল যে পেছনে রক্ষণদ্বার যে একেবারে উন্মুক্ত করে রেখে এসেছে, তা সম্ভবত ভুলেই গিয়েছিলেন দলটির ডিফেন্ডাররা। তারা ভুলে গিয়েছিল যে ‘হাঙর’ খ্যাত ফেররান তোরেস নেমেছে মাঠে। ফলে যা হওয়ার ছিল, তা-ই হলো।
প্রতিপক্ষের পা থেকে একবার বল কেড়ে নিয়েই রাফিনিয়ার পায়ে দিয়ে দেন লামিন, আর এগিয়ে গিয়ে ডর্টমুন্ডের জালে মরণ কামড় বসিয়ে দেন দীর্ঘদিন পর মাঠে ফেরা এই স্প্যানিশ ফরোয়ার্ড।
পরে যোগ করা সময় মিলিয়ে প্রায় দশ মিনিট ধরে ডর্টমুন্ড আবারও ম্যাচের ফেরার চেষ্টা করে। তবে এবার সতর্ক হয়ে পরিস্থিতির সামাল দেয় বার্সেলোনা। ফলে উত্তেজনার পর উত্তেজনা ছড়িয়েও শেষ পর্যন্ত ৩-২ গোলের পরাজয় বরণ করে নিতে হয় নুরি সাহিনের শিষ্যদের।
চলতি মৌসুমে ঘরের মাঠে সব মিলিয়ে এটিই ডর্টমুন্ডের প্রথম হার। আর জিগনাল ইদুনায় প্রথম জয়ের স্বাদ পেল বার্সেলোনা।
এই জয়ের ফলে ডর্টমুন্ডের বিপক্ষে অপরাজেয় যাত্রা ১৪ বছরে নিয়ে গেল বার্সেলোনা। তাছাড়া ৬ ম্যাচে ৫ জয়ে ১৫ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষস্থানে থাকা লিভারপুলের (১৮) ঠিক পরেই নিজেদের অবস্থান মজবুত করল কাতালান জায়ান্টরা।
দিনের অপর ম্যাচে মোনাকোকে ৩-০ গোলে হারিয়ে ১৩ পয়েন্ট নিয়ে তিনে উঠে এসেছে আর্সেনাল, আর ভুগতে থাকা ম্যানচেস্টার সিটিকে ২-০ গোলে হারিয়ে আরও বিপদে ফেলে দিয়েছে ইউভেন্তুস। ৬ ম্যাচে ৮ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের ২২তম স্থানে রয়েছে পেপ গার্দিওলার দল।
ষষ্ঠ রাউন্ডের খেলা শেষে আর্সেনালের সমান ১৩ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের অষ্টম স্থান পর্যন্ত রয়েছে যথাক্রমে বায়ের লেভারকুজেন, অ্যাাস্টন ভিলা, ইন্টার মিলান, ব্রেস্ত ও লিল। ১২ পয়েন্ট নিয়ে নবম ডর্টমুন্ড; সমান পয়েন্ট নিয়ে দশম, একাদশ ও দ্বাদশ স্থানে যথাক্রমে বায়ার্ন মিউনিখ, আতলেতিকো মাদ্রিদ ও এসি মিলান।