Logo
Logo
×

রাজনীতি

দুর্ঘটনায় বাচ্চা হারানো মা কুকুরের ৮ ঘণ্টা সড়কে ‘অবস্থান’

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৮ জানুয়ারি ২০২৫, ০১:৩০

দুর্ঘটনায় বাচ্চা হারানো মা কুকুরের ৮ ঘণ্টা সড়কে ‘অবস্থান’

সন্তানের প্রতি মমত্ববোধ যে ‍শুধু মানবকুলের মধ্যে সীমাবদ্ধ না, তা যেন আরও একবার প্রমাণ হলো। আর এর প্রমাণ দেখলেন ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার ফুলতলার কাঁচাবাজার এলাকার মানুষ। 

আজ শুক্রবার (১৭ জানুয়ারি) সকালে ওই বাজারে একটি মা কুকুর মোটরসাইকেলচাপায় মারা যাওয়া তার মৃত ছানার দেহ আঁকড়ে বসে ছিল দীর্ঘ আট ঘণ্টা। এর মধ্যে মৃত ছানাটিকে সড়ক থেকে সরিয়ে নিতে চেয়েও পারেননি উপস্থিত লোকজন। উল্টো কুকুরছানাটিকে যে সরাতে গেছেন, সে-ই মা কুকুরটির তাড়া খেয়েছে।

ফুলতলা কাঁচাবাজারের ব্যবসায়ী ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সকাল সাড়ে ৮টার দিকে চারটি ছানা সঙ্গে নিয়ে সড়ক পার হচ্ছিল মা কুকুরটি। এ সময় একটি দ্রুতগামী মোটরসাইকেল একটি ছানাকে চাপা দেয়। সঙ্গে সঙ্গে মা কুকুরটি ‘ঘেউ ঘেউ’ করতে করতে মোটরসাইকেলটিকে ধাওয়া করে। কিছুক্ষণ পর ফিরে এসে আহত ছানার দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকে। এরপর সন্তানের শরীর চাটতে শুরু করে। যেন ভালোবাসার পরশ দিয়ে সন্তানের সব বেদনা নিজে শুষে নিতে চায়। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। খানিক পরে ছানাটি মারা যায়। এরপর মা কুকুরটি নিশ্চুপ হয়ে সড়কের ওপর মৃত ছানার পাশে দাঁড়িয়ে যায়।

দৈনিক প্রথম আলো তাদের ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধির বরাতে এক প্রতিবেদনে জানায়, ছানা মারা যাওয়ার পর মোটরসাইকেল দেখলেই ‘ঘেউ ঘেউ’ করে উঠছিল কুকুরটি

বালিয়াডাঙ্গীর দুওসুও গ্রামের মো. সিরাজউদ্দিন বলেন, কুকুরছানাটি মারা যাওয়ার পর মা কুকুরটি মোটরসাইকেল দেখলেই জোরে ঘেউ ঘেউ করতে করতে গতিরোধ করে। আবার কোনো কোনো মোটরসাইকেলের টায়ার শুঁকে দেখে। মা কুকুরটি হয়তো এভাবে বের করতে চাচ্ছিল, তার ছানাটিকে কোন মোটরসাইকেলে চাপা দিয়েছে।

ছানাটি মারা যাওয়ার পর থেকে মা কুকুরটিকে সেখান থেকে সরানো যায়নি বলে জানান বাজারের মুরগি ব্যবসায়ী মামুনুর রশিদ। তিনি বলেন, রাস্তা থেকে কুকুরছানার মৃতদেহটি সরিয়ে নিতে চাইলেও মা কুকুরটি তা দেয়নি। সুভাস দাস নামের এলাকার এক পরিচ্ছন্নতাকর্মী মৃত ছানাটি সরাতে পায়ে দড়ি বাঁধতে গেলে মা কুকুরটি তাঁর দিকে তেড়ে আসে। তা দেখে ওই পরিচ্ছন্নতাকর্মী দৌড়ে রক্ষা পান।

দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে অন্য ছানাদের নজর রাখতে ছুটে যায় মা কুকুরটি। এর এক ফাঁকে মামুনুর রশিদ ছানাটির মরদেহ রাস্তার একপাশে সরিয়ে দেন। এরপর কুকুরটি মৃত ছানাটির পাশে বসে পড়ে এদিক-ওদিক তাকাতে থাকে। বিকেল সাড়ে ৪টায় শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত মা কুকুরটি মৃত ছানার পাশে অবস্থান করছিল।

বালিয়াডাঙ্গী বাজারের সবজি ব্যবসায়ী আবদুল কুদ্দুস বলেন, আগে আমরা কুকুরটিকে বিস্কুট-পাউরুটি কত কী খেতে দিতাম। ছানাটি মারা যাওয়ার পর কুকুরটি কিছু খাচ্ছেও না।

ঠাকুরগাঁও শহরের প্রবীণ শিক্ষাবিদ অধ্যাপক মনতোষ কুমার দে সংবাদমাধ্যমকে বলেন, মাতৃস্নেহ পৃথিবীর সবচেয়ে পবিত্র বিষয়। মাতৃস্নেহ যেমন মানবের ক্ষেত্রে লক্ষ করি, তেমনি অন্যান্য প্রাণীদের ক্ষেত্রেও এই মাতৃস্নেহটি গভীরভাবে রয়েছে। যখন কোনো কুকুরছানা সড়কে দুর্ঘটনায় মারা যায়, তখন মা কুকুর মানবশিশুর মায়ের মতোই দিশাহারা হয়ে পড়ে এবং কান্নায় ব্যাকুল হয়ে পড়ে। যদিও তার কান্না আমরা প্রত্যক্ষ করতে পারি না; কিন্তু তার আচরণের মধ্য দিয়ে মাতৃস্নেহের প্রবলতা প্রকাশ পায়।

Logo

অনুসরণ করুন