Logo
Logo
×

জাতীয়

ধর্ষণের প্রতিবাদে শাহবাগে লাগাতার অবস্থান নেওয়া শেখ ইমির পরিচয়

Icon

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৫ মার্চ ২০২৫, ২২:০৪

ধর্ষণের প্রতিবাদে শাহবাগে লাগাতার অবস্থান নেওয়া শেখ ইমির পরিচয়

ছবি: সংগৃহীত

দেশে অব্যাহতভাবে নারী ও শিশু ধর্ষণ, নির্যাতন, নারীদের দলবদ্ধভাবে হেনস্তা ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে রাতে–দিনে দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রতিবাদ হচ্ছে। এরই মধ্যে গত ৮ মার্চ নারী দিবসের বিভিন্ন আয়োজনে-অনুষ্ঠানে-আলোচনায় দেশের নারী ও কন্যাশিশুদের নিরাপত্তার বিষয়টি সেভাবে উঠে আসেনি বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শামছুন নাহার হল সংসদের সাবেক ভিপি (সহ-সভাপতি) শেখ তাসনিম আফরোজ ইমি। 

এই ‘ক্ষোভ’ থেকে এবং দেশব্যাপী নারী ধর্ষণ, নিপীড়ন, নির্যাতন ও হেনস্তার প্রতিবাদে পাঁচ দফা দাবি নিয়ে নারী দিবসের রাত থেকেই অবস্থান নেন ঢাকার শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনের ফুটপাতে।

ইমি শুরুতে ওই অবস্থানে একা ছিলেন। পরে তার সঙ্গে সংহতি জানাতে আসেন কেউ কেউ। আজ শনিবার (১৫ মার্চ) তাদের এই অবস্থানের অষ্টম দিন চলছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাবির সমাজবিজ্ঞান বিভাগে পড়াশোনা করেছেন ইমি। থেকেছেন শামসুন্নাহার হলে। কোটা সংস্কার দাবির আন্দোলনে সক্রিয় ইমি নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পক্ষেও সোশাল মিডিয়ায় সোচ্চার ছিলেন।

এরই ধারবাহিকতায় ২০১৮ সালের ১৪ আগস্ট মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ইমিকে শামসুন্নাহার হলের সামনে থেকে তুলে নিয়েছিল ডিবি পুলিশ। তখন পুলিশ জানিয়েছিল, গুজব ছড়ানোর অভিযোগে তাকে আটক করা হয়। পরে অবশ্য জিজ্ঞাসাবাদ করে মুচলেকা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সহকারী প্রক্টর ও একজন হাউজ টিউটরের জিম্মায় ছেড়েও দেওয়া হয়েছিল। 

তৎকালীন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম গোলাম রাব্বানী বলেছিলেন, তাকে জানিয়েই ইমিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ।

তিনি সেই সময় সংবাদমাধ্যমকে বলেছিলেন, সম্প্রতি বিভিন্ন সময়ে ফেইসবুকে বিভিন্ন কন্টেন্ট ছড়ানোয় ওকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আজ রাতে ডিবির মহিলা পুলিশ নিয়ে গেছে। আমাদের অবহিত করেই নিয়েছে।

আর ডিবি কর্মকর্তাদের উদ্ধৃত করে ডিএমপি নিউজের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, নিরাপদ সড়কের আন্দোলনকে ভিন্ন দিকে প্রবাহিত করার লক্ষ্যে সোস্যাল মিডিয়ায় গুজব ছড়ানোর অভিযোগে ইমিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পরে অবশ্য ডিএমপি নিউজ সেই প্রতিবেদনটি তুলে নেয়।

খুলনার মেয়ে ইমি সাংস্কৃতিক সংগঠন স্লোগান ৭১-এর সাবেক সাধারণ সম্পাদক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রক্তদাতাদের সংগঠন বাঁধনের কার্যকরী পরিষদের সাবেক সদস্য তিনি। ঢাকা ইউনিভার্সিটি ডিবেটিং সোসাইটিতেও যুক্ত তিনি। জাতীয় নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্যও ছিলেন তিনি। এ ছাড়া তিনি জাতীয় নাগরিক কমিটির দলিত, হরিজন ও তফসিলি সেল এবং শহীদ পরিবার ও আহত কল্যাণ সেলের সদস্যও ছিলেন। 

এর আগে কোটা সংস্কার আন্দোলন, নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনে সরাসরি রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করা ইমি স্বতন্ত্র প্যানেল থেকে ডাকসুর হল সংসদ নির্বাচনে শামসুন নাহার হল থেকে ভিপি হয়েছিলেন। 

উল্লেখ্য, শামছুন নাহার হলের সাবেক এ ভিপির পাঁচ দফা দাবির প্রথম দফা হলো— ধর্ষণ ও বলাৎকারের বিচার কার্যক্রম নিম্ন আদালত থেকে উচ্চ আদালত পর্যন্ত সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া ১৮০ দিনের মধ্যে নিষ্পন্ন করা এবং দ্রুত রায় কার্যকর করা। দ্বিতীয় দফা হলো–প্রতিটি থানায় একজন নারী পুলিশ কর্মকর্তার নেতৃত্বে নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে একটি ইমার্জেন্সি ক্রাইসিস রেস্পন্স টিম গঠন করা। একইসাথে খানার অভ্যন্তরে ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টার প্রতিষ্ঠা করা যেখানে ভুক্তভোগী নারী ও শিশুদের নিরাপত্তা, চিকিৎসা সহায়তা, আইনগত সহায়তা ও মানসিক সমর্থন সেবা দেওয়া হবে। এ দফাটি কার্যকর করতে ৭২ ঘন্টার আল্টিমেটাম দেন তিনি।

দাবির তৃতীয় দফাটি হলো–নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ধারা-১৪ সংশোধনপূর্বক ধর্ষণের শিকার ভিক্টিমের পরিচয় প্রকাশের ক্ষেত্রে সংবাদমাধ্যমের উপর যে বিধিনিষেধ আরোপ করা আছে সেই ধারায় সংবাদমাধ্যমের সাথে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকেও যুক্ত করা। চতুর্থ দফা হলো ধর্ষণের শিকার ভিক্টিমের মানসিক,শারীরিক এবং সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ সরকারকে নেওয়া।

পঞ্চম দফা হলো–নারী ও শিশুর উপর সংঘটিত সকল নির্যাতনের বিরুদ্ধে সচেতনতা তৈরির জন্য সরকারকে উদ্যোগী ভূমিকা পালন করা। এই উদ্যোগগুলোর মাধ্যমে সমাজের প্রতিটি শ্রেণী-স্তরের নারী ও শিশুদেরকে সচেতন করা যাবে। একইসাথে স্কুল-কলেজের পাঠ্যপুস্তকে নৈতিক শিক্ষা, লিঙ্গ সমতা পাঠদানের বিষয় হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা।

এই এক সপ্তাহে সরকারের দায়িত্বশীল কেউ খোঁজ না নেওয়ায় দুঃখপ্রকাশ করেছেন শেখ তাসনিম আফরোজ ইমি। তিনি বলেন, ’সরকারের দায়িত্বশীল মহল থেকে কেউই আমাদের সাথে যোগাযোগ করেননি এবং আশা জাগানিয়া কোনো উদ্যোগও নেননি। লাগাতার প্রতিকূল এবং অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে অবস্থান করার বিরূপ প্রভাব ইতোমধ্যে আমাদের স্বাস্থ্যের ওপর দেখা দিয়েছে। সরকার এভাবে দিনের পর দিন নাগরিকদের সাথে এ রকম অবহেলামূলক আচরণ করতে পারে না। নারী পুরুষ নির্বিশেষে সকল নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে আমরা আমাদের সুস্পষ্ট ৫টি দফা পেশ করেছি।

ইমি আরও বলেন, '৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস ছিল। নারী দিবসের বিভিন্ন আয়োজনে আমার মনে হয়নি যে নারীদের নিরাপত্তা এবং আমাদের কন্যাশিশুদের নিরাপত্তার ব্যাপারটি সেভাবে আলোচনায় উঠে এসেছিল। তখন আমি আরও বেশি ক্ষুব্ধ হই। আমার মনে প্রশ্ন জাগে—নারীদের আয়োজনে নারীদের সমস্যা কেন অ্যাড্রেস করা হচ্ছে না? এসময় আমার মনে হয় যে দেয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছে। কিছু একটা করতে হবে। সেই সিদ্ধান্ত থেকেই রাস্তায় বেরিয়ে আসা এবং অবস্থান নেওয়া।'

Logo

অনুসরণ করুন