হেনস্তার শিকার ঢাবি শিক্ষার্থী জানালেন
গত ২ দিন তার সঙ্গে কি ঘটেছে

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ০৭ মার্চ ২০২৫, ১১:১৭

ছবি: সংগৃহীত
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাসে এক ছাত্রী পোশাক নিয়ে হেনস্তার শিকার হন। বিশ্ববিদ্যালয়টিরই এক কর্মচারী শাহবাগের রাস্তায় ওই শিক্ষার্থীকে হেনস্তা করে। পরে শিক্ষার্থীর অভিযোগের ভিত্তিতে ওই ব্যক্তিকে আটকও করা হয়েছিল। যদিও নানা নাটকীয়তা শেষে শাহবাগ থানা পুলিশ ওই ব্যক্তিকে ছেড়ে দেন। ওই শিক্ষার্থীও তার দায়ের করা অভিযোগ তুলে নিয়েছেন।
হেনস্তা ও মামলা তুলে নেওয়া নিয়ে গত দুই দিন ধরে যা যা ঘটেছে তার বিস্তারিত এক ফেসবুক পোস্টে তুলে ধরেছেন তাহমিনা তাহিন নামের ওই শিক্ষার্থী। পাঠকদের জন্য হুবহু তার পোস্টটি তুলে দেওয়া হলো :
‘গত দুইদিন ধরে আমার সাথে যা হলো এই নিয়ে কিছু বলতে ইচ্ছা করলো।
১। আমাকে যারা না চিনে শাহবাগী বললেন তারা কিসের বেসিস এ বললেন । কতটুকু চিনেন আমাকে?? রাস্তায় একটা লোক পথ আটকে দাঁড়িয়ে আপনাকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলবে আর আপনি এইটার প্রতিবাদ করলে হয়ে যাবেন শাহবাগী বাহহহ। আমার বাবা , মা প্র্যাকটিসিং মুসলিম। আমি হয়ত পরিপূর্ণ পর্দা করতে পারি নি। কিন্তু সব সময় শালীন পোশাকে বের হই। আমাকে যারা চিনেন তারা জানেন আমি সালওয়ার কামিজ এবং শাড়ি ছাড়া অন্য পোশাক খুব একটা পরি না। তাও সব সময় ফুল স্লিভ হাতা ড্রেস পরি। যত টুকু জানি এইটা আমাদের দেশীয় সংস্কৃতির সাথে মানানসই পোশাক।
২। এবার আসি জুলাই অভ্যুত্থান এর সময় কিছু ঘটনা নিয়ে। আমি প্রত্যেকদিন আন্দোলনে যেতাম। ফ্রন্ট লাইনার ছিলাম না। কিন্তু রেগুলার আন্দোলনে যাওয়া ছিল আমার রুটিন। যেদিন ঢাবি হল খালি করে দিচ্ছিল। আমরা ৬-৭ জন মেয়ে সবার শেষে বের হই। আমাদের বের করেই গেট এ তালা লাগায় হলের দায়িত্বরত কর্মচারীরা। কেনো যেতাম আন্দোলনে জানেন?? আমি বিসিএস দিবো ও না। শুধু মাত্র দাবিটা যৌক্তিক তাই যেতাম।
৪ ই আগস্ট ২০২৪, আমি সারারাত ঘুমাই নাই। সারারাত জেগে তাহাজ্জুদ পড়েছি, কুরআন পড়েছি। যাতে করে আমার যে ভাই গুলো গণভবনে যাবেন তারা যেনো বিনা বাধায় ফ্যাসিস্ট এর পতন করতে পারে। তাদের উপর যেনো আর হামলা না হয়। আমার এখনো মনে আছে আমি সিজদায় গিয়ে কান্না করে বলসিলাম যাতে আমার কোনো ভাই আগামীকাল মারা না যায়। আমরা যেনো বিজয়ী হতে পারি। কিন্তু দেখেন আমি কতটা বোকা। ভেবেছিলাম হাসিনার পতনের পর নতুন বাংলাদেশ গড়বো। যেখানে সব মতাদর্শের মানুষ সহাবস্থান করবে দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা হবে😅😅😅।
৩। যারা নিজেকে তৌহিদী জনতা বলে থাকেন আপনারা কি জানেন আপনারা যখন ৫ ই আগস্ট এর পর নিজের ধর্মীয় লেবাসে বের হতেন আমি নিজে এই বিষয়টাতে কতটা খুশি হতাম। ভাবতাম যাক সবাই ব্যক্তি স্বাধীনতা ফিরে পেয়েছে। মানুষগুলার উপর গত ১৬ বছর ধরে জুলুম হয়েছে। আর দেখেন আমি যখন আমার দেশীয় পোশাক পরে রাস্তায় হাটি তখন আপনারা আমার শরিরের সাইজ মাপেন। কত সুন্দর আপনার আকিদা তাই না??
৪। এইবার আসি দেশের বিচার ব্যবস্থা নিয়ে, আমার সেন্সিটিভ ইনফরমেশন পুলিশ পাবলিক করেছে। তাদের জিজ্ঞাসা করায় বলেছে এজহার কপি নাকি পাবলিক করা যায়। তাহলে এজহার কপিতে এত ইনফরমেশন তারা কেনো রাখেন?? এগুলা অন্য আরেক জায়গায় রাখুক। আর এই বিষয়টা আমাকে শুরুতেই তারা কেনো বলে দেয় নি?? তাহলে আমি মামলাই করতাম না। আপনাদের এই ফালতু নিয়মের জন্য আমার গত সারারাত কি কি সহ্য করা লাগসে কোনো আইডিয়া আছে আপনাদের? এই পুলিশ বাহিনী আর তাদের এসব ফালতু নিয়ম কবে চেঞ্জ হবে?? অসংখ্য নাম্বার থেকে রেপ আর ডেথ থ্রেট দেওয়া হয়েছে। কেনো?? প্রতিবাদ করেছি তাই। আপনারা তো ফ্যাসিস্ট হাসিনার চেয়ে খারাপ। আপনারা তো দেশকে নরক বানাবেন।
৫। আর ইন্টেরিম গভমেন্ট কে বলছি দেশের বিচার ব্যবস্থা কবে চেঞ্জ করবেন?? কবে আসবে আপনাদের সংস্কার?? যদি না করতে পারেন দায়িত্ব ছেড়ে দেন। কিছু মানুষ গিয়ে থানায় মব করবে তাও এমন একজনের বিরুদ্ধে যে নিজের দোষ স্বীকার করেছে তাকে ছেড়ে দেওয়া হবে। বাহ্ পুলিশ বাহ্।
৬। এই ঘটনা এইটাই প্রমাণ করে যে দেশে এখন অপরাধ করে, ইভটিজিং করে বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়ানো যাবে। ভিকটিম স্টেপ নিলেও উল্টা তাকে হয়রানি করা হবে। বিশ্বাস করেন এই দেশ নিয়ে আর কোনো আশা নেই। আমাদের আন্দোলন করা ভুল হয়েছে। এতগুলো মানুষ এমনেই মারা গেছেন। পারবেন তাদের রক্তের ঋণ শোধ করতে?? ভেবেছিলাম দেশে থাকবো। বিদেশ এ যাবো phd করে একদিন এই দেশের জন্য কিছু করবো। কিন্তু বিশ্বাস করেন এখন এই দেশ থেকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চলে গেলেই বাচি।’