আওয়ামী লীগের গোপন বৈঠকে গুরুতর তথ্য বেনজিরের

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৭:৪০

ক্ষমতাচ্যুত ও পলাতক আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে গোপন এক বৈঠকে অংশ নিয়েছেন পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজির আহমেদ। এতে তিনি পুলিশে আওয়ামী লীগের অবস্থান নিয়ে গুরুতর কথা বলেছেন। তার বক্তব্যের একটি অডিও-ভিডিও ফাঁস হয়েছে।
বৈঠকে আওয়ামী লীগের পলাতক নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বেনজির বলেন, 'আপনারা যখন সংগঠিত হবে, তখন পুলিশের উপস্থিতি আপনাদের সামনে থাকবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই।'
তিনি বলেন, বিএনপি, এরশাদ সরকারের আমলে অনেক এমপি পুলিশের মধ্যে তাদের লোক ঢুকিয়েছিল। এসব লোক এখনও পুলিশে রয়েছেন, যারা নিজেদের পার্টির সঙ্গে যুক্ত এবং রাজনৈতিক কাজে সক্রিয়।
'এই ধরনের পুলিশ সদস্যদের এখনও অনেকেই তাদের কাজে সক্রিয় এবং রাজনৈতিক অবস্থান নিতে প্রস্তুত,' বলেন তিনি।
পুলিশের মনোভাব প্রসঙ্গে বেনজির বলেন, এখনকার পুলিশ বাহিনীর মনোবল বেশ ভেঙে গেছে। অনেক পুলিশ সদস্য এই সরকারের প্রতি ক্ষুব্ধ। কারণ তাদের অনেককেই হত্যার মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা হয়েছে। ৪২৭টি থানা ও পুলিশ ফাঁড়িতে হামলা হয়েছে, অস্ত্রপাতি লুট করা হয়েছে, এমনকি প্রেগনেন্ট কনস্টেবলকেও পুড়িয়ে মারা হয়েছে। ওরা তো এগুলো সহজভাবে নেয়নি।
তিনি বলেন, কনস্টেবল থেকে ইন্সপেক্টর, এদের একটা বিশাল অংশ খুবই আনহ্যাপি, এটা বলতে পারি। তবে ওই প্রশ্নটা, তাহলে আমাদের ধরে কারা? অ্যারেস্ট করে কারা? ধরে হচ্ছে, ওই পার্টি।
সাবেক আইজিপি বৈঠকে জানান, ৫ আগস্টের পর পুলিশ বাহিনীর এক বড় অংশ কর্মস্থল ত্যাগ করেছে, এবং এরপর তাদের অনেককে অকার্যকর জায়গায় পাঠানো হয়েছে। অনেক পুলিশ সদস্য চাকরিচ্যুতও হয়েছেন, আর তাদের জায়গায় রিটায়ার্ড পুলিশ সদস্যদের নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে।
'জিয়া, বিএনপি সরকারের সময় যারা চাকরিতে যোগদান করেছিলেন, তারা এখনও পুলিশ বাহিনীতে আছেন। তাদের সংখ্যা খুব বেশি নয়, কিন্তু যখন আওয়ামী লীগ সংগঠিত হবে, তখন তাদেরকে পুলিশ বাহিনীতে খুব সহজেই দেখা যাবে।'
বেনজির আহমেদ বলেন, তিনি তার দলের মধ্যে থাকা পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করছেন এবং তাদের কাছ থেকে সাহায্য পাওয়ার আশা করছেন।
পুলিশের প্রতিবাদ
সাবেক আইজিপি বেনজির আহমেদের বক্তব্যকে গোপন ষড়যন্ত্র বলে উল্লেখ করেছে বাংলাদেশ পুলিশ এসোসিয়েশন। এসোসিয়েশনের সভাপতি কামরুল হাসান তালুকদার ও সাধারণ সম্পাদক মনিরুল হক ডাবলু স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এর প্রতিবাদ জানানো হয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘জুলাই-আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে জন-আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে জনবান্ধব পুলিশ বাহিনী গঠনে পুলিশের সকল সদস্য অত্যন্ত দৃঢ়তার সাথে ও দেশপ্রেমের চেতনা নিয়ে নিরলসভাবে কাজ করে আসছেন। পুলিশ বাহিনীর যে সকল বিতর্কিত সদস্য গণহত্যাসহ ফ্যাসিস্ট সরকারের আজ্ঞাবহ হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন দেশের প্রচলিত আইনে তাদের বিচারের বিষয়ে বাংলাদেশ পুলিশের সকল সদস্য একমত পোষণ করে।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, এ ধরনের সভায় অংশগ্রহণ এবং বক্তব্য প্রদান দেশের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র এবং রাষ্ট্রদ্রোহিতার সামিল। ব্যক্তির দায়-ভার কখনো কোন বাহিনী বহন করে না।২০১৩ সালে হেফাজতের বিরুদ্ধে ঢাকার মতিঝিল শাপলা চত্বরে সংঘটিত গণহত্যা, হাজার কোটি টাকার দুর্নীতির ঘটনায় সম্পৃক্ততা ও একাধিক দুদকের মামলায় অভিযুক্ত একজন ব্যক্তির বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনী, সরকার ও রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে এ ধরনের কর্মকাণ্ডে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর সকল পুলিশ সদস্য মর্মাহত এবং ক্ষুব্ধ।