Logo
Logo
×

জাতীয়

নতুন পাঠ্যবইয়ে শেখ হাসিনার পতনসহ আরও যেসব পরিবর্তন

Icon

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৪ জানুয়ারি ২০২৫, ১৭:২৯

নতুন পাঠ্যবইয়ে শেখ হাসিনার পতনসহ আরও যেসব পরিবর্তন

বেশ কয়েকটি গল্প-কবিতা বাদ পড়েছে ২০২৫ শিক্ষাবর্ষের পরিমার্জিত পাঠ্যবইয়ে। আর নতুন করে যুক্ত করা হয়েছে গল্প-কবিতার পাশাপাশি ২০২৪ সালের জুলাই অভ্যুত্থান। অভ্যুত্থান নিয়ে লেখায় স্থান পেয়েছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পতনের কথা। গুরুত্বের সঙ্গে জায়গা পেয়েছে জুলাই অভ্যুত্থানের শহীদ আবু সাইদ ও মুগ্ধ। 

নতুন বছরের প্রথম দিনেই শিক্ষার্থীদের হাতে সীমিত পরিসরে তুলে দেওয়া হয়েছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) প্রণীত নতুন শিক্ষাবছরের পাঠ্যবই। সংশোধিত ও পরিমার্জিত সব বইয়ের অনলাইন ভার্সন পাওয়া যাচ্ছে এনসিটিবির ওয়েবসাইটে। 

নবম ও দশম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ের ‘আমাদের গৌরব গাঁথা’ নামে নতুন গদ্যে যুক্ত করা হয়েছে ২০২৪ সালের ছাত্র আন্দোলন নিয়ে লেখা। এই লেখায় গণভবন দখল এবং শেখ হাসিনার পতনের ঘটনা তুলে ধরা হয়। এই লেখায় উল্লেখ আছে—‘সেদিন ৫ই আগস্ট ২০২৪- ৩৬শে জুলাই। বাংলাদেশের ক্যালেন্ডার জুলাইতে থেমে গেছে। শুধু দেশ নয় সারা দুনিয়ার মানুষ তাকিয়ে আছে বাংলাদেশের দিকে। আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতা এক দফা দাবি পেশ করেছে।’ 

এতে আরও উল্লেখ করা হয়, ‘সারা দেশ থেকে মানুষ ঢাকায় ছুটছে। ঘেরাও করবে গণভবন। মূলোৎপাটন করবে শাসনক্ষমতা আঁকড়ে থাকা ফ্যাসিবাদী শাসককে। কারফিউ উপেক্ষা করে ঢাকার উত্তরার পথে মানুষের দেখা মিলল। যাত্রাবাড়ীর দিকে মানুষ জড়ো হতে থাকল ধীরে ধীরে। নামল মানুষের ঢল। জনতা গণভবনে পৌঁছে যায় দুপুর নাগাদ। পতন অত্যাসন্ন টের পেয়ে স্বৈরাচার সরকারপ্রধান পালিয়ে যান দেশ ছেড়ে।’      

নবম ও দশম শ্রেণি: নবম ও দশম শ্রেণির বাংলা সাহিত্য বইয়ের রবীন্দ্রনাথের ‘দেনাপাওনা’, মোতাহের হোসেন চৌধুরীর ‘লাইব্রেরি’, জহির রায়হানের ‘বাঁধ’ গল্প বাদ গেছে।  জহির রয়হানের বাঁধ গল্পটি বাদ দিয়ে যুক্ত করা হয়েছে ‘একুশের গল্প’। সেলিনা হোসেনের ‘রক্তে ভেজা একুশ’, হুমায়ূন আহমেদের ‘নিয়তি’ এবং জাফর ইকবালের ‘তথ্য প্রযুক্তি’ বাদ দেওয়া হয়েছে। নতুন করে যুক্ত হয়েছে ‘আমাদের গৌরবগাঁথা’

কবিতা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে কাজী নজরুল ইসলামের ‘আজ সৃষ্টি সুখের উল্লাসে’, সৈয়দ শামসুল হকের বাঙালির আত্মপরিচয়ের ইতিহাস নিয়ে লেখা ‘আমার পরিচয়’। কবি নির্মলেন্দু গুণের ‘স্বাধীনতা, এ শব্দটি কীভাবে আমাদের হলো’ এবং কামাল চৌধুরীর ‘সহসী জননীর কথা’। নতুন করে যুক্ত করা হয়েছে ২০২৪ সালের অভ্যুত্থান নিয়ে লেখা ‘আমাদের গৌরবগাঁথা’।

অষ্টম শ্রেণি: অষ্টম শ্রেণির ‘সাহিত্য কণিকা’ বইয়ে বাদ দেওয়া হয়েছে কামরুল হাসানের ‘আমাদের লোক শিল্প’ ও মোতাহার হেসেন চৌধুরীর ‘লাইব্রেরি’। নতুন করে যুক্ত করা হয়েছে ‘গণঅভ্যুত্থানের কথা’। অষ্টম শ্রেণির বাংলা দ্রুতপঠন পাঠ্যবইয়ের শুরুতে ছিল জাতীয় চার নেতার ছবি, পরিমার্জিত নতুন বইয়ে তা বাদ দেওয়া হয়েছে।

সপ্তম শ্রেণি: ২০১২ সালের শিক্ষাক্রমের ভিত্তিতে প্রণীত ২০২২ সালের সপ্তম শ্রেণির বাংলা পাঠ্যবই ‘সপ্তবর্ণা’ ২০২৫ সালে পরিমার্জন করা হয়েছে। এই পাঠ্যবই থেকে গৌরিপ্রসন্ন মজুমদারের ‘শোন একটি মুজিবরের থেকে’ ও সুনির্মল বসুর ‘সবার আমি ছাত্র’ কবিতা দুটি বাদ দেওয়া হয়েছে। যুক্ত করা হয়েছে হাসান রুবায়েতের কবিতা ‘সিঁথি’। হাসান রুবায়েতের কবিতার বিষয় হচ্ছে ২০২৪ সালের জুলাই আন্দোলন। কবি লিখেছেন, ‘ভাই মরলো রংপুর/সেই রংপুরই তো বাংলাদেশ/নুসরাতেরা আগুন দিল/দোজখ যেন ছড়ায় কেশ/কওমি তরুণ দাঁড়ায় ছিল/কারবালারই ফোরাতে/শাহাদতের আগুন দিলে/খুনির আরশ পোড়াতে/।

হেলিকপ্টার থেকে গুলি করার দৃশ্য

ষষ্ঠ শ্রেণি: ষষ্ঠ শ্রেণির ‘চারুপাঠ’ বইয়ে ‘কার্টুন, ব্যঙ্গচিত্র ও পোস্টারের ভাষা’ শিরোনামে মুক্তিযুদ্ধের সময় নিতুন কুণ্ডের আঁকা একটি পোস্টার ‘সদা জাগ্রত বাংলার মুক্তিবাহিনী’ ব্যবহার করা হয়েছে। এছাড়া ১৯৮২ সালে স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে পটুয়া কামরুল হাসানের ‘দেশ আজ বিশ্ববেহায়ার খপ্পরে’ শিরোনামের ব্যঙ্গচিত্র যুক্ত করা হয়েছে। ২০২৪ সালের জুলাই অন্দোলনের পোস্টারও আছে এই অধ্যায়ে। তবে পাকিস্তানি শাসক ইয়াহিয়া খানের বিরুদ্ধে পটুয়া কামরুল হাসানের বিখ্যাত চিত্রকর্ম ‘এই জানোয়ারটা আবার আক্রমণ করতে পারে’, পরবর্তীকালে ‘এই জানোয়ারকে হত্যা করতে হবে’ শিরোনামের চিত্রকর্মটি ব্যবহার করা হয়নি। তবে ২০২৪ সালে ছাত্র আন্দোলনের প্রেক্ষাপট বিবেচনায় ব্যবহার করা হয়েছে হেলিকপ্টার থেকে গুলি করার একটি দৃশ্য।

ষষ্ঠ শ্রেণির ‘চারুপাঠ’ থেকে সৈয়দ শামসুল হকের ‘কত দিকে কত কারিগর’ শিরোনামের গদ্য লেখাটি বাদ দেওয়া হয়েছে। যুক্ত করা হয়েছে কামরুল হাসানের ‘আমাদের লোকশিল্প’।  রোকনুজ্জামান খানের ছড়া ‘মুজিব’ বাদ দিয়ে তারই লেখা ‘চিঠি বিলি’ যুক্ত করা হয়েছে।

বাদ পড়েছে ‘ফেব্রুয়ারি গান’ ছড়া

পঞ্চম শ্রেণি: ২০২২ সালে প্রণীত পঞ্চম শ্রেণির ‘আমার বাংলা বই’ এর প্রথম প্রচ্ছদে ছিল বিভিন্ন জাতি-গোষ্ঠীর মানুষের ছবি। এবার সেখানে স্থান পেয়েছে ফুল-পাখিসহ প্রকৃতিক সৌন্দর্যের দৃশ্য।  এই বই থেকে গল্প ও কবিতার মধ্য থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে লুৎফর রহমান রিটনের ছড়া ‘ফেব্রুয়ারি গান’, সেখানে যুক্ত করা হয়েছে নির্মল বসুর কবিতা ‘সবার আমি ছাত্র’। ‘স্মরণীয় যাঁরা বরণীয় যাঁরা’ গদ্যের শিরোনামটি পাল্টে দেওয়া হয়েছে। এখনকার  শিরোনাম হচ্ছে, ‘স্মরণীয় যাঁরা চিরদিন’।

বাংলাদেশের প্রত্নতত্ত্বিক নির্দশন নিয়ে লেখা গদ্য ‘মাটির নিচে যে শহর’ বাদ দেওয়া হয়েছে। সেখানে নতুন গদ্য যুক্ত করা হয়েছে, ‘আমরা তোমাদের ভুলব না’। এই গদ্যে শহীদ তিতুমীর, শহীদ প্রীতিলতা, শহীদ আমানুল্লা মো. আসাদুজ্জামান, শহীদ মতিউর রহমান মল্লিক, শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক, শহীদ অধ্যাপক ড. মুহম্মদ শামসুজ্জোহার পরে যুক্ত করা হয়েছে শহীদ নূর হোসেন, শহীদ ডা. মিলন, শহীদ নাসির উদ্দিন জেহাদের নাম। এরপর যুক্ত করা হয়েছে ২০২৪ সালে ছাত্র আন্দোলনে নিহত শহীদ আবু সাঈদ ও শহীদ মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধের নাম।

‘দেখে এলাম নায়াগ্রা’ গল্পটি বাদ দিয়ে ঈশপের গল্প— ‘জলপরী ও কাঠুরের গল্প’ যুক্ত করা হয়েছে। কবি শামসুর রাহমানের ‘রৌদ্র লেখে জয়’ কবিতা বাদ দিয়ে যুক্ত করা হয়েছে কবি আল মাহমুদের জনপ্রিয় ‘নোলক’ কবিতাটি। মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীকে নিয়ে লেখা গদ্যটি বাদ দিয়ে সেখানে যুক্ত করা হয়েছে ‘কুমড়ো ও পাখির কথা’ গদ্য। শহীদ তিতুমীরকে নিয়ে লেখা বাদ দিয়ে যুক্ত করা হয়েছে আরব্য উপন্যাসের আলিফ লায়লার গল্প ‘দৈত্য ও জেলে’। আর মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে গল্প সেলিনা হোসেন ‘অপেক্ষা’ বাদ পড়েছে।

চতুর্থ শ্রেণি: চতুর্থ শ্রেণির বাংলা বই থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে শেখ মুবিবকে নিয়ে মমতাজ উদ্দিন আহমেদের লেখা গদ্য ‘বাংলার খোকা’ এবং সানাউল হকের ‘মুক্তি ছড়া’।  যুক্ত হয়েছে নতুন গদ্য ‘টুনুর কথা’ ও রজনী কান্তের ‘স্বাধীনতার সুখ’ কবিতা। ‘মোবাইল ফোন’ শিরোনামের গদ্যটি বাদ দিয়ে যুক্ত করা হয়েছে ‘বই পড়ায় অনেক মজা’।

তৃতীয় শ্রেণি: ২০২৩ সালে প্রণীত তৃতীয় শ্রেণির বাংলা বই পরিমার্জন করে যুক্ত করা হয়েছে ‘ঘাষ ফড়িং ও পিঁপড়ার গল্প’। বাদ দেওয়া হয়েছে শেখ মুবিবের ছোটবেলা নিয়ে লেখা ‘সেই সাহসী ছেলে’, যুক্ত করা হয়েছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ছেলেবেলা’।

‘পহেলা বৈশাখ’ পরিবর্তন করে ‘নববর্ষ’

দ্বিতীয় শ্রেণির বাংলা বইয়ে যুক্ত করা হয়েছে ‘সিংহ আর ইঁদুরের গল্প’।  ‘পহেলা বৈশাখ’ গল্পটির নাম পরিবর্তন করে রাখা হয়েছে ‘নববর্ষ’। লেখা ও ছবিতে আনা হয়েছে পরিবর্তন। মঙ্গল শোভাযাত্রা বা পহেলা বৈশাখের শোভাযাত্রার ছবি বাদ দিয়ে বৈশাখের অন্য সব উপকরণের ছবি ব্যবহার করা হয়েছে। শেখ মুবিবকে নিয়ে লেখা ‘সোনার ছেলে’ গল্প বাদ দিয়ে যুক্ত করা হয়েছে ‘দুখু মিয়ার জীবন’ গল্পটি।

Logo

অনুসরণ করুন